অর্থ সম্পদ যায় থাকুক না কেন, মানসিক শান্তি না থাকলে আসলে সেগুলোর খুব একটা মূল্য থাকে না৷
অপর দিকে অর্থ সম্পদের প্রাচুর্য না থাকলেও যদি মানসিক শান্তি থাকে, তাহলে সেটা সম্পদের প্রাচুর্য থাকার চেয়ে ঢের ভালো।
বর্তমান সময়ের দিকে তাকালে এই কথা ভালো ভাবেই বোঝা যায়, দিন যত যাচ্ছে মানুষের আরাম প্রিয়তা বাড়ছে, নিত্য নতুন সব প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের কস্ট যদিও অনেকাংশে কমেছে।
ধন সম্পদের প্রাচুর্য যদিও ক্রমবর্ধমান…..
কিন্তু সেই সাথে বিদেয় হয়েছে মানুষের মনের শান্তি টুকু। এর ফলে দেখা যায় অনেক সম্পদের প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও মানুষ অত্নহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।
প্রযুক্তির এই সব নতুন নতুন উদ্ভাবন মানুষের জীবন কে সহজ করলেও, মানসিক শান্তি বাড়ার কোন কোন যন্ত্রই আবিষ্কার করতে পারে নি। আর এটা সম্ভবও নয়৷
আজ আমরা জানবো কিভাবে মানসিক শান্তি পাওয়া যায় বা কোথায় গেলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায় এই বিষয়টি সুন্দর ভাবে জানতে আমাদের লিখা টি অবশ্যই আপনাকে পুরোপুরি পড়তে হবে। চলুন শুরু করা যাক।
মানসিক শান্তি কি?
কোথায় গেলে মানসিক শান্তি পাওয়া যাবে এ বিষয়ে জানার আগে জানতে হবে মানসিক শান্তি কি। মানসিক শান্তি হলো মানুষের অভ্যন্তরের অদৃশ্য একটি বিষয়। একজন মানুষের অভ্যন্তরের প্রশান্তি এবং আত্মতৃপ্তিকে এবং পক্ষান্তরে সকল ধরনের মানসিক চাপ, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ইত্যাদি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখাকে মানসিক শান্তি বলে গণ্য করা হয়।
সহজ ভাষায় বললে, মনের শান্তিকেই মানসিক শান্তি বলা হয়। মানসিক শান্তি সম্পূর্ণ একটি আপেক্ষিক বিষয়। সময়ের সাথে সাথে এর পরিবর্তন হয় এবং এটি নির্দিষ্ট কোন বিষয়ের উপর নির্ভরশীল নয়।
মানসিক শান্তি এমন একটি জিনিস যা আমাদের জীবনকে উপভোগ করার সুযোগ করে দেয় এবং জীবনকে ইতিবাচক মনোভাবের মাধ্যমে জীবন পরিচালনা করতে সাহায্য করে। নেতিবাচক চিন্তা এবং খারাপ আবেগ দ্বারা আমাদের জীবনকে কোন ভুল পথে পরিচালনা করতে দেয় না।
মানসিক শান্তি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
মানসিক শান্তি এমন একটি বিষয় যা আমাদের সব ধরনের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারো মাঝে যদি মানসিক শান্তি বজায় থাকে তবে তার শরীর ও মন দুটি ভালো থাকে।
মানসিক শান্তি এমন একটি বিষয় যা ধনী-গরিব সকলেই কামনা করে থাকে। কারণ সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপনের জন্য মানসিক শান্তির কোন বিকল্প নেই। বলা যায় মানসিক শান্তি না থাকলে পৃথিবীর সব কিছুই তুচ্ছ । কোন কিছুর সাথেই এর তুলনা হয় না বলেই এর গুরুত্ব এত বেশি।
মানসিক শান্তি বজায় রাখার মাধ্যমে সব সময় চাপমুক্ত এবং ঝামেলা মুক্ত থাকা যায়। মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকাটা অত্যন্ত জরুর, কারণ মানসিক চাপ আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগের জন্ম দেয় এবং আমাদের মস্তিষ্ককে ক্ষয় করে।
মানসিক শান্তির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের মানসিক যে সকল রোগ রয়েছে তা থেকে দূরে থাকা যায়। জীবন হতাশা, দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, উদ্বেগ, বিষণ্নতা একাকীত্ব, সূচিবায়ু ইত্যাদি সকল রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়। এর ফলে আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে এবং দীর্ঘদিন সুস্থ থাকা যায়।
মানসিক শান্তিতে থাকলে জীবনকে খুব সুন্দর ভাবে উপভোগ করা যায়। জীবনের যত চ্যালেঞ্জ বা সমস্যা আসুক না কেন তা সহজে মোকাবেলা করা যায়। নিজে ভালো থাকা যায় এবং পাশাপাশি অন্য কেউ ভালো রাখা যায়।
যেহেতু আজকের আলোচ্য বিষয় টি হল কোথায় গেলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়, তাই এ বিষয়টি সম্বন্ধে ধারণা পেতে হলে অবশ্যই এর আগে মানসিক শান্তির গুরুত্ব সম্বন্ধে জানা জরুরী। যা সঠিক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে জানা সম্ভব তাহলে চলুন এ বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।
কোথায় গেলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়?
বর্তমানে এই কঠিন সময়ে এবং ব্যস্ত জীবনে মানসিক শান্তি খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত কঠিন একটি বিষয়। চারপাশে তাকালে অনেকের ভিতরেই দেখা যায় মানসিক অশান্তির আভাস। মানুষ যেন এক অশান্তির নগরীতে বসবাস করছে প্রতিনিয়ত ।
চারিদিকের পরিস্থিতি, সমাজ, প্রকৃতি, ব্যক্তি জীবন সবকিছু মাঝেই এক অস্থিরতা বিরাজ করছে সর্বদা। যার মধ্যে মানসিক শান্তি নিশ্চিত করাটা একটু কষ্টকর বিষয়। কিন্তু তারপরও নিজেকে ভালো রাখতে হলে মানসিক শান্তি খুঁজতে হবে। নিজের শরীর ও মন কে ভালো রাখতে গ্রহণ করতে হবে সুষ্ঠু ও সুন্দর পদক্ষেপ। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কোথায় গেলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায় এ সম্পর্কে:-
প্রকৃতি
প্রকৃতিতে গেলে কারো মানসিক শান্তি নিশ্চিত হবে না এমন মনে হয় কোন মানুষ পৃথিবীতে নেই। বিশেষজ্ঞরা বলেন সবুজের সংস্পর্শে গেলে মানসিক স্বাস্থ্য এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদের হৃদয়কে প্রশান্ত করার মাধ্যমে মানসিক শান্তি নিশ্চিত করে থাকে। যেমন পাহাড়ে ভ্রমণ, সমুদ্র ভ্রমণ, বিভিন্ন পার্ক, গ্রাম অঞ্চল ইত্যাদি বিভিন্ন স্থান।
ধর্মীয় উপাসনালয়
ধর্মীয় উপাসনালয় হতে পারে মানসিক শান্তির একটি বিশেষ স্থান। সকল ধর্মেই শান্তির বার্তা প্রদান করে থাকে। তাই ধর্মীয় কার্যক্রম এবং সেবা মানুষের মনে তৈরি করতে পারে এক অন্যরকম মানসিক প্রশান্তি। সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য অর্জনের মাধ্যমে মানসিক শান্তি নিশ্চিত করার জন্য ধর্মীয় উপাসনালয় হতে পারে মানসিক শান্তির একটি অন্যতম স্থান।
সুন্দর ও সৃজনশীল কাজকর্ম
সুন্দর ও সৃজনশীল কাজকর্ম মানুষের জীবনকে সুন্দর করে তোলে। যদি কোন মানুষ তার জীবনে তার পছন্দ অনুযায়ী একটি পেশা বা কাজ গ্রহণ করে যা হবে সুন্দর এবং সৃজনশীল তবে তা মানসিক শান্তি জোগাতে অত্যন্ত সাহায্য করে। এর মাধ্যমে মানুষ নিজেকে প্রকাশের এবং প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায়। পাশাপাশি একটি মানুষের দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ থেকে রক্ষা করে। কাজগুলো হতে পারে চিত্রাংকন , সংগীত বা শিল্পচর্চা, লিখালিখি ইত্যাদি।
সমাজে বসবাস
একটি সম্প্রদায় মানুষকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। পৃথিবীতে কোন মানুষ একা বসবাস করতে পারে না। তাকে একটি সম্প্রদায় অথবা কিছু মানুষের মধ্যে বসবাস করতে হয়। আপনার সম্প্রদায় এমন ভাবে নির্বাচন করা উচিত যেখানে গেলে আপনি মানসিক শান্তি লাভ করবেন। আপনি এমন কিছু মানুষের সাথে মেলামেশা করুন বা সম্পর্ক গড়ে তুলুন যারা আপনার সমমনা এবং সহায়ক ব্যক্তি। যারা কখনো আপনাকে মানসিকভাবে কষ্ট দিবে না।
যোগব্যায়াম
যোগব্যায়াম এর মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে মানুষ মানসিক শান্তি লাভের চর্চা করছে এবং তারা সফলতা অর্জন করেছে। এটি ধ্যান ও শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানসিক ও শারীরিক শান্তির ব্যবস্থা করা হয়। যোগব্যায়ামের প্রধান উদ্দেশ্য হল নিদৃষ্ট কিছু উপায় মানসিক শান্তি ও শক্তির উন্নতি করা এবং পাশাপাশি আপনার শরীরকে সুস্থ রাখা। এছাড়াও অন্যান্য ব্যায়ামের মাধ্যমেও মানসিক শান্তি অর্জন করা যায়।
জ্ঞান অর্জন
জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে আমরা মানসিক শান্তি লাভ করতে পারি আমরা যারা জ্ঞানপিপাসু মানুষ। জ্ঞান অর্জনের অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে। যেমন জ্ঞান অর্জনের জন্য আমরা লাইব্রেরীতে গিয়ে বই পড়তে পারি, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আমরা জ্ঞান অর্জন করতে পারি এছাড়া জ্ঞানী ব্যক্তিদের সংস্পর্শে থেকে জ্ঞান অর্জন করতে পারি। এর মাধ্যমে আমরা সকল ধরনের দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকতে পারি মানসিক শান্তি অর্জনের মাধ্যমে জীবন কাটাতে পারি।
ধ্যনে বা একাকিত্বে
ধ্যনে বা একাকিত্বের মাঝে মানসিক শান্তি খুঁজে পাওয়া যায় যা প্রাচীন যুগ থেকে প্রচলিত একটি মাধ্যম। একাকীত্ব সব সময় খারাপ নয় বরং কখনো কখনো এটা আমাদের জন্য ভালো কিছু বয়ানে আনে। নিজেকে জানার জন্য, অভ্যন্তরীণ শান্তি অর্জন এবং মনকে শান্ত করার জন্য আমরা ধ্যানকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। এত ব্যস্ততার মাঝেও আমাদের উচিত নিজেকে একটু সময় দেওয়া নিরিবিলি কিছুক্ষণ সময় একাকী কাটানো যা বয়ে আনতে পারে আমাদের মানসিক শান্তি।
আত্মীয়-স্বজন
আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধব যারা আমাদের অনেক কাছের তাদের কাছে গেলেও আমরা কখনো কখনো মানসিক শান্তি খুঁজে পাই।যারা আমাদের প্রতি অত্যন্ত যত্নবান এবং যারা আমাদের জীবনের পথ চলাতে সহজ করে তাদের সংস্পর্শে থাকলে মানসিক শান্তি নিশ্চিত হয়। বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনকে সময় দেওয়ার মাধ্যমেও আমরা খুজে পেতে পারি আমাদের আত্মার শান্তি যাদের সাথে রয়েছে আমাদের আত্মার সম্পর্ক।
মানসিক শান্তি আমাদের সকল সুখ ও সুস্থতার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমরাই ইতমধ্যে জানতে পারলাম এ আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে। সমাজের একজন সঠিক মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা, প্রকাশ করা এবং অবদান রাখার জন্য প্রয়োজন একটি সুস্থ মস্তিষ্ক এবং সুন্দর মন মানসিকতার। ভিন্ন উপায়ে মানসিক শান্তি অর্জন করা সম্ভব শুধুমাত্র প্রয়োজন আমাদের প্রচেষ্টা।
উপসংহার
সর্বোপরি বলা যায় মননশীলতা অনুশীলন ও উন্নতির মাধ্যমে, আবেগ কি নিয়ন্ত্রণ, নেতিবাচক চিন্তাভাবনা ইত্যাদির মাধ্যমে মানসিক শান্তি অর্জন করতে হবে। স্বযত্নের মাধ্যমে অর্থাৎ নিজের মানসিক ও শারীরিক যত্নের মাধ্যমে নিজেদের মানসিক শান্তি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ জীবনকে পরিবর্তন করতে হলে এবং জীবনে উন্নতি সাধন করতে হলে মানসিক শান্তির বিকল্প নেই।
তাই আশা করি আপনারা এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন কোথায় গেলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়। যা আপনারা জীবনে প্রয়োগ করে জীবনকে সুন্দর ও সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করতে পারবেন। নিজের জীবনকে সুন্দর করুন এবং অন্যের জীবনকে সুন্দর করতে সাহায্য করুন মানসিক শান্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে।
COMMENTS