'চুরাল মুরিয়াল' (Chooral Muriyal) রীতি অনুযায়ী ১০ বছরের কম বয়সের বাচ্চা ছেলেদের বলি দেওয়া হয় মন্দিরে র ভগবান এর কাছে। সোনার সুঁচে সুতা ঢুকিয়ে তা দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করা হয় তাদের দেহ...
আধুনিক যুগে এসে ও মধ্যযুগীয় বর্বরতা কে হার মানাচ্ছে 'চুরাল মুরিয়াল' (Chooral Muriyal) এর ঘটনা।
'চুরাল মুরিয়াল' (Chooral Muriyal) হচ্ছে শিশুবলির অপর এক নাম। দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের চেট্টিকুলাঙ্গারা মন্দিরের আড়াইশো বছরের ঐতিহ্য হিসেবে মানুষ বলি দেওয়ার এক ভয়ানক ধর্মীয় রীতি পালন করা হয়। যার নাম চুরাল মুরিয়াল। ধনী পরিবারগুলো মার্চ মাসে কেরালার 'কুম্বাভারানি উৎসবে' ছেলে শিশুদের কে বলি দিয়ে দেবতা কে এভাবে তুষ্ট করে।
'চুরাল মুরিয়াল' (Chooral Muriyal) রীতি অনুযায়ী ১০ বছরের কম বয়সের বাচ্চা ছেলেদের বলি দেওয়া হয় মন্দিরে র ভগবান এর কাছে। সোনার সুঁচে সুতা ঢুকিয়ে তা দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করা হয় তাদের দেহ। ধারণা করা হয় এই শিশুদের রক্তে তুষ্ট হন দেবতা। যে পরিবার এই প্রথা মেনে পূজা দিচ্ছে তাদের ওপর ভগবান আশীর্বাদ বর্ষণ করেন। গরীব পরিবার থেকে সন্তান কিনে এনে তাকে স্নান করিয়ে পবিত্র করানোর পর তাকে মেয়েদের মতো মেকআপ করানো হয়, চকচকে রঙিন পোশাক পরিধান করানো হয় এবং গলায় পরানো হয় ফুলের মালা। যেন বিয়ে করতে যাচ্ছে কোনো হিন্দু কিশোর!
আর এখানে আছে আরও একটি টুইস্ট। 'চুরাল মুরিয়াল' (Chooral Muriyal) পূজা সাধারণত করে থাকে ধনী পরিবারগুলো। আর তারা এই রীতি র জন্য নিজের বাড়ির ছেলেদের কখনোই এগিয়ে দেন না; বরং পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে একেবারে গরীব পরিবারগুলো থেকে তাদের শিশুপুত্র দের কিনে আনেন তারা। পূজা করার এই বর্বর রীতি তারা প্রাচীনকাল থেকেই বলবৎ রেখেছে।
সেই বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে 'চুরাল মুরিয়াল' (Chooral Muriyal) নামে অমানবিক প্রথা চালু রাখতে শিশু কেনাবেচার মতো
গুরুতর অপরাধও চলে সারা কেরল জুড়ে। অভিযোগ, ‘দেবী’র আশীর্বাদ লাভের আশায়
গরিব পরিবারের কাছ থেকে বাচ্চাদের কিনে নেয় অর্থবান পরিবার। প্রায় ৫০ হাজার থেকে
১ লক্ষ টাকায় এই কেনাবেচা চলে বলে অভিযোগ।
সরকার কর্তৃক ২০১৬ সাল থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় 'চুরাল মুরিয়াল' (Chooral Muriyal) এর প্রথা র উপর । তবুও এই বছর এও হয়ে গেল নরবলি। সুঁই দিয়ে আঘাতে ছোট ছেলেদের কে, (মেয়ে দের তারা এই নরবলি তে গ্রহণ করে না, এটা দেবতা র ইচ্ছা হতে পারে!) হত্যা করেই পূজা নামের এই বর্বরতার বিরোধিতা একজন সভ্য মানুষ এর পক্ষে মেনে নেওয়া খুব কষ্টকর।
ধর্ম যেটাই হোক, 'চুরাল মুরিয়াল' (Chooral Muriyal) এর নামে অবাধে মানুষ হত্যা মেনে নেওয়া যায় না। আবার সেটা যদি হয় ধর্মীয় উদ্দেশে করা, তাহলে তো আরও বেশি ঘোর বিরোধী হবো আমরা সভ্য জনসমাজ।
এই সকল অমানুষ দের কে আবার কোরবানির সময় বুকফাটা হাহাকার করতে দেখবেন। যেই কারণেই হোক ধর্ম কখনো কোন সময় এই মানুষের মনুষ্যত্বের সার্বিক বিকাশের জন্য অত্যাবশ্যক উপাদান হতে পারে না।
পুনশ্চঃ শিশু নির্যাতন রোধে যখন সারা দেশ জুড়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ করা হচ্ছে, সেখানে 'চুরাল মুরিয়াল' (Chooral Muriyal) প্রথার বিরোধিতা হয়েছে কেরলেও। ২০১৬ সালে 'চুরাল মুরিয়াল' (Chooral Muriyal) প্রথাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে
কেরল স্টেট কমিশন ফর প্রোটেকশন অব চাইল্ডস। এ নিয়ে মামলাও শুরু হয় উচ্চ
আদালতে। সেই মামলায় কেরল হাইকোর্ট ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে 'চুরাল মুরিয়াল' (Chooral Muriyal) প্রথাকে
নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
তারপরেও বন্ধ হয়নি শিশু অধিকার ভঙ্গকারী 'চুরাল মুরিয়াল' (Chooral Muriyal) নামে অমানবিক এই প্রথা। প্রতি বছর মার্চ মাসে শুরু হয় এই অ মানবিক উৎসব। ওই দিনের জন্য ২৬ জন দশ বছরের কম বয়সী শিশুকে তাদের
বাড়ি থেকে এনে রাখা হয়েছে চুরাল মুরিয়ালের জন্য।
COMMENTS